স্বার্থপর পরী গল্প ৭
স্বার্থপর পরী গল্প
পর্ব-৭
-
দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট এর দিকে কলেজে আসলাম মিথিলাকে দেখার জন্য।
সাগর-কিরে এখন কেন আসলি একটু পর তো কলেজ ছুটি হয়ে যাবে একটা ক্লাস আছে।
আমি-আরে আমি কি ক্লাস করতে আসছি খুব মন খারাপ লাগতেছিল তাই মিথিলাকে দেখার জন্য আসছি।
সাগর-হুম ভালোই তো আমরা বললে তো আসিস না দরকার হলেও পাওয়া যায়না আর দুইদিনের একটা মেয়ের জন্য আসিস ছুটির টাইমে।
আমি-দেখ সাগর মিথিলাকে দুইদিন না আমি দুইবছর আগে থেকে ভালোবাসি রিলেশন টা হয়তো কয়েকদিনের আর তোরা কিন্তু মিথিলার পরে আমার লাইফে আসছিস,আচ্ছা কোনদিন কি তোদের বিপদে আমাকে পাশে পাছ নাই।নাকি তোদের সাথে কখনো খারাপ বিহেভ করছি কষ্ট পাইলাম তোর কথা শুনে।
সাগর-সরি দোস্ত ভুলে বলে ফেলছি মায়ার সাথে ঝগড়া হয়ছে তো তাই মাথা ঠিক নাই।
আমি-কেন কি হয়েছে?
সাগর-আরে ফাস্ট ইয়ারের একটা মেয়ের সাথে কথা বলছি তাই রাগ করছে।
আমি-আচ্ছা আমি কথা বলে সব ঠিক করে দিবো।
সাগর-আচ্ছা দোস্ত থ্যাংকস।
আমি-ওকে তো এখন তোরা কি দোতলায় যাবি।
সাগর-হুম চল।
-
তারপর আমি সাগর,সজল,শাকিল দোতলায় চলে গেলাম মিথিলাদের শেষ ক্লাস তাই ওদের ক্লাস রুমের আগে দাড়িয়ে আমরা গল্প করতেছিলাম।
একটুপরেই মিথিলাদের ক্লাস শেষ হলো আমার পরী ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে ভুত দেখার মত চমকে উঠল,অবাক হয়ে তাকিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল আর চোখের দৃষ্টিতে বোঝালো আমাকে নিচে নামতে।
আমরা সবাই নিচে নামলাম তারপর সবাইকে বললাম তাহলে ভালোথাকিস তোরা কালকে দেখা হবে।বন্ধুদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে কলেজের গেইটের সামনে দারিয়ে আছি মিথিলার অপেক্ষায় একটু পর মিথিলা আসল।
-
মিথিলা-তুমি এখন কলেজে আসলা কেন?
আমি-বোঝনা কেন আসছি তোমাকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছিল তাই।
মিথলা-হয়ছে দেখা এখন তারাতাড়ি চলো বাসায় যাবো অনেক খুদা লাগছে আজকে।
আমি-হুম চলো তারপর হাটতে হাটতে মিথিলা কে বললাম পরী অনেক ভালোবাসি।
মিথিলা-পাগল এতো ভালোবাসো কেন গো।
আমি-আচ্ছা অল্প ভালোবাসবো তাহলে হবে।
মিথিলা-না না পাগল অনেক ভালোবাসলেই হবে।
আমি-ওকে আমার লক্ষী পাগলী।
বাজারে চলে আসলাম মিথিলাকে বললাম তোমার না অনেক খুদা লাগছে তো হোটেলে চলো কিছু খেয়ে নিই।মিথিলা কোন কিছুতেই হোটেলে গেল না আমার অনেক রাগ হলো।
মিথিলা-(হাসিমুখে বললো)আচ্ছা আইসক্রিম খাবো।
আমি-বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বললাম খুদা লাগলে কেও আইসক্রিম খাই নাকি।
মিথিলা-আমি খাই।
তারপর দুইটা আইসক্রিম নিয়ে আসলাম একটা মিথিলাকে দিলাম।দিতেই দেখি বাচ্ছাদের মত করে খাচ্ছে মনে মনে ভাবতেছি আইসক্রিমেই এত খুশি বিয়ের পর আইসক্রিমের একটা দোকান দিবো কিন্তু কারো কাছে বিক্রি করবো না শুধু বউ এর জন্যে হাসতেছিলাম আর ভাবছিলাম।
মিথিলা-হাসতেছো কেন খাও।
আমি-হুম খাচ্ছি।
মিথিলা-হুম চলো এখন বাসায় জাই।
তারপর গাড়িতে উঠলাম পাশাপাশি বসলাম ইদানীং ওর পাশে বসতে অনেক ভালোলাগে।হঠাৎ একটা মহিলা যাত্রী আসল,ড্রাইভার ভাই বলল সামনে আসুন ভাই।আমি একটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে সামনে বসলাম।মিথিলা হাসল কিন্তু আমার অনেক রাগ হলো।আজকে একটা কথাও বলতে পারলাম না ধ্যাত।মিথিলা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল আমার ভাড়া দিয়ে দিল আমি কিছু বললাম না। ও মায়াবী চোখে তাকিয়ে ছিল আমি দেখতেছিলাম আর ভাবতেছিলাম।ড্রাইভার ভাই বললো নামুন ভাই চলে আসছি।তারপর পকেটে থেকে মানিব্যাগ বের করে ভাড়া দিচ্ছু ড্রাইভার বললো ওই আপুতো আপনার ভাড়া দিয়ে দিছে।আচ্ছা খেয়াল ছিলোনা ভাইয়া।ওর দিকে তাকালে সব ভুলে যায় এতো মায়াবী কেন।ভাবলাম বিয়ের পর মায়াবতী বউ বলে ডাকবো আমার পরী টাকে ভালোই হবে।
বাসায় চলে আসলাম সারাদিন অনেক ধকল গেছে খেয়ে গুমিয়ে পরলাম।
বিকেল ৫.৩০ মিনিটে জাগনা পেলাম ফ্রেশ হয়ে বাসা থেকে বের হলাম একটু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেলাম।
সোহাগ-ইদানিং কোন খোজ খবর পাওয়া যায়না খুব প্রেমে ব্যস্ত।
আমি-আরে না আমি কি তোর মতো মেয়েদের পিছে ঘুরি।
সোহাগ-আচ্ছা এই নে সিগারেট খা।
আমি-নারে খাইনা আর বাদ দিয়ে দিছি তুই খা।
ওয়ালিদ-বাব্বাহ তাহলে তো আমার ও একটা প্রেম করতে হবে তাহলে তো সিগারেট খাওয়া টা ছাড়তে পারবো।
সজল-ধ্যত আমার জি এফ রে বলছি তোমার কসম আমি আর সিগারেট খাবোনা,বাট কসম দেয়ার পর থেকে এখন বেশি খাওয়া হয়।
সোহাগ-তুই ও কি কসম দিছস নাকি।
আমি-নারে ভাই তোরা ভুল ভাবতেছিস আসলে যার জন্য সিগারেট খাইতাম তারে তো পাইছি তাই আর খাইনা।
-
অনেক্ষন আড্ডা দিলাম ৮ টার দিকে বাসায় আসলাম একটু পরতে বসলাম।পদার্থ বিজ্ঞান বই নিয়ে বসে আছি বাট কিছু মাথায় আসতেছেনা,মিথিলাকে অনেক মিস করতেছি বইয়ের পাতায় মনোযোগ দিতে পারছিনা।দেখি পরী টাকে একটা মেসেজ দেই।
আমি-হাই পরী।
মিথিলা-এতক্ষনে আমার কথা মনে পড়লো।
আমি-সবসময় মনে পড়ে কিন্তু এখন বেশি ডিস্টার্ব করতেছিলে তাই মেসেজ দিলাম।
মিথিলা-আমি আবার কখন ডিস্টার্ব করলাম।
আমি-করো তো আমাকে পড়তেও দাওনা বইয়ের পাতাতে তুমি চলে আসো ঘুমাতেও দাওনা স্বপ্নের মধ্যে চলে আসো।
মিথিলা-পাগল একটা খাইছো রাতে।
আমি-না কিছুক্ষন পরে খাবো,তুমি খাইছো?
মিথিলা-না গো ছোট ভাইকে পড়াচ্ছিলাম একটু পর খাবো।
আমি-পরী আই লাভ ইউ।
মিথিলা-আই লাভ ইউ টু পাগল।
আমি-আই মিস ইউ সোনা পাখি।
মিথিলা-সেইম টু ইউ সোনা পাখি।
আমি-আই কিস,,,,,মেসেজ সেন্ড করতেই দেখি সাগর কল দিছে কিছুটা বিরক্ত নিয়া বললাম কিরে কি হয়ছে।
সাগর-দোস্ত মায়া আমার ফোন ধরতেছেনা মেসেজ এর রিপ্লাইও করছেনা এখন একটু দেখ কথা বলে প্লিজ আমার কিছু ভালো লাগছেনা।
আমি-আচ্ছা নাম্বার টা বল।
সাগর-০১৭........৬৭ এইটা ওর নাম্বার তোর পরিচয় দিলেই চিনবে।
তারপর আমি ডায়াল করলাম মায়ার নাম্বারে।
মায়া-আসসালামু আলাইকুম,কে আপনি।
আমি-ওয়ালাইকুম আসসালাম কেমন আছো মায়া আমি সাগরের বন্ধু জয়।
মায়া-হ্যা ভাইয়া ভালো আছি আপনি কেমন আছেন।
আমি-তোমরা কি ভালো থাকতে দিচ্ছো ঝগড়া কেনো করছো সাগর ফোন দিয়ে অনেক কান্নাকাটি করতেছে।
মায়া-ওই লুচ্ছা মইরা যাক তাও ওর কথা বলবেন না ওর কয়টা লাগে আমি থাকতে আবার ফাস্ট ইয়ারের একটা মেয়ের সাথে পুতুপুতু করে।
আমি-আসলে আপু হয়ছে কি তুমি ওরে ভুল বুঝতেছো।
মায়া-ভাইয়া রাখেন তো ওর কথা শুনতে ইচ্ছা করতেছেনা আমার।
আমি-(যে রাগ রেগে আছে বেশি কিছু বললে আমার উপরেও রাগ দেখাবে থাক তার থেকে কল রেখে দেই)আচ্ছা আপু বাই ভালো থেকো।
-
তারপর সাগরের কাছে ফোন দিলাম।
সাগর-কি বলছে দোস্ত মায়া।
আমি-কি বলবে জা সত্যি তাই বলছে,তুই একটা লুচ্ছা,মইরা যা,তোর কয়টা লাগে একটাতে কি মন ভরে না সালা লুচ্চা ভালো হতে পারিস না।
সাগর-দোস্ত এইবার মেনেজ কর ভালো হয়ে যাবো।
আমি-এই ভালো হওয়ার কথা আমার জীবনে অনেকবার শুনলাম তুইতো ভালো হইলিনা যা পারস কর তুই।
সাগর-প্লিজ দোস্ত এমন করস না।
আমি-আচ্ছা ও তো অনেক রেগে আছে কালকে কলেজে যেয়ে সামনাসামনি কথা বলবো।
সাগর-আচ্ছা সকাল করে আসিস।
আমি-হুম ৬ টা বাজেই চলে জাবো।
সাগর-রাগ করিস কেন নয়টা বাজে আসলেই হবে।
আমি-আচ্ছা ওকে ভালো থাকিস আম্মু ডাকতেছে পরে কথা হবে আল্লাহ হাফেজ।
আম্মু অনেক ডাকতেছিল।
আমি-আম্মু ডাকতেছো কেন।
আম্মু-কখন থেকে ডাকতেছি কথা বলিস না কেনো।
আমি-সাগরের সাথে ফোনে কথা বলতেছিলাম তো তাই।
আম্মু-তারাতাড়ি আই খেয়ে নে আমি ঘুমাবো ওষুধ খেয়ে।
তারপর সাথে সাথেই চলে গেলাম খেতে,খেতে খেতে হঠাৎ মনে পড়লো আমি তো মিথালার সাথে কথা বলতেছিলাম ওর তো মেসেজের রিপ্লাই ও করিনি।আল্লাহ জানে রাগ করছে নাকি পাগলীটা।আর খাইতে ইচ্ছা করছেনা তাই হাত ধুয়ে রুমে চলে গেলাম,ফোনটা হাতে নিয়ে তো আমি শেষ।
৩ টা মেসেজ।
*কি হলো কথা বলো না কেন।
*আমি খেয়ে আসলাম তাও তোমার খোজ নাই,কি করো।
*এত কার সাথে ফোনে কথা বলছো,আচ্ছা আমার সাথে কথা বলতে হবেনা যার সাথে কথা বলতে বিজি তার সাথেই বলো,বাই গুড নাইট (আর কিছু রাগি ইমোজি)।
-
যা আমিতো শেষ ফ্রেন্ডের জি এফ এর রাগ ভাজ্ঞাতে যেয়ে এখন আমার নিজের জিএফ এ রেগে বোম।
মেসেজ দিলাম সরি সোনাপাখি সাগরের আর মায়ার ঝগড়া হয়ছে তো তাই ওদের সাথে কথা বলতেছিলাম।
১০ মিনিট হয়ে গেল দেখি কোন রিপ্লাই নাই।ফোন দিলাম বাট জিপি কোম্পানির মিস্টি ভয়েসে বলা দুঃখিত আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মুহূর্তে বন্ধ আছে শুনতেও অনেক তেতো লাগলো।
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।আমার ভুল হয়ছে ওরে যদি বলতাম তাহলে পরী টা এতো রাগ করতোনা।
রাত ২ টা বাজে আমি প্রায় ১০০ বারের ও বেশি ফোন দিছি ওর ফোন বন্ধ।ঘুম আসতেছেনা তাই আম্মুর ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমালাম।
কালকে ফ্রেন্ডের জিএফ এর রাগ ভাঙ্গানোর কথা ছিল কিন্তু এখন আমার গার্লফ্রেন্ডের রাগ ভাঙ্গাতে হবে হাইরে কপাল আমার,,,,,,,,,,
-
চলবে,
-
আপনাদের যদি ভালোলেগে থাকে অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না,যদি ভালো না ও লেগে থাকে জানাবেন প্লিজ,লাইক কমেন্ট দিয়ে সাথে থাকবেন।আপনাদের ভালোলাগার গুরুত্ব দিয়েই পরবর্তী পর্ব নিয়ে হাজির হবো।
-
ধন্যবাদ।