Ghost Story
ওর চেহারার একপাশ একদম বিভৎস হয়ে আছে!
ভয়ে আমি কিছু দূরে গড়িয়ে পড়লাম। ওর
মুখটা আরো থ্যাতলানো, বিশ্রী একটা রূপ
নিচ্ছে। আমি ভয়ে কুকড়ে গেলাম। মূহুর্তেই
আমি অনবরত ঘেমে যাচ্ছি। হৃদস্পন্দন বেড়েই
চলেছে। ঘড়িতে সেকেন্ডের কাটার শব্দটাও
আমার কাছে ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে।
আমার গল্পের শুরু এক ভগ্নপ্রায় মন্দির এর
ভেতর থেকে। যা আজও আমাকে তাড়া করে
যাচ্ছে।
আমি রোহান। পেশাগত ভাবে আমি একজন
প্রকৌশলী। একটি কাজের জন্য আমাকে
পার্বত্য অঞ্চলে আসতে হয়েছে।
আমার থাকার জন্য যে বাংলো দেয়া
হয়েছে তা প্রাচীন কালের ঐতিহ্য বহন করে।
এ যেন এক অট্টালিকা।
কিন্তু বহু বছর কেউ বসবাস না করার জন্য
বাড়িটিকে পোড়ো বাড়ি বলে মনে হয়। দূর
থেকে দেখলে গা ছমছম করে।
এখানে আমি থাকব বলে দোতলায় দক্ষিণ
কোণের দুইটা ঘর বাসযোগ্য করা হয়েছে।
এখান থেকে দূরে পাহাড়ের সারি চোখে
পড়ে।
আমাকে দেখাশোনার জন্য দুইজন কর্মচারীও
দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম
দীমূর সাং এবং তার মেয়ে মালাইকা সাং।
এরা স্থানীয় উপজাতি।
আমি থাকব বিশ দিন। এই বাংলোয় আজ
আমার সতেরো তম দিন।
এর আগেও কয়েকবার আমি এখানে এসে
থেকেছি। তাই জায়গাটা আমার বেশ
পরিচিত।
প্রতিবারই আমার সব ধরনের কাজ করে দেয়
দীমূর সাং এবং তার মেয়ে মালাইকা সাং।
মালাইকা সাং খুব চঞ্চল প্রকৃতির এবং
দেখতেও রূপসী।
আজ আমি ওকে নিয়ে চার পাশে ঘুরে দেখব
বলে বেরিয়েছি। ও আমাকে এক ভগ্নপ্রায়
মন্দির দেখাবে বলল। ও আমাকে জঙ্গলের
ভেতর দিয়ে নিয়ে আসে মন্দির এর কাছে।
মন্দির এর ভেতরটা দেখে আমি বড়ো ধরনের
একটা ধাক্কা খেলাম।
আমি এর আগে যতবারই এসেছি মালাইকা
আমাকে এই মন্দির দেখাতে নিয়ে আসতে
চেয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে দেখতে
আসা হয়ে ওঠে নি। কিন্তু এবার মালাইকা
আমাকে একপ্রকার জোর করেই ধরে নিয়ে
আসলো মন্দির দেখানোর জন্য।
আমি দেখলাম ভেতর থেকে মাটির নিচে
নামার জন্য একটি সিড়ি নেমে গেছে এবং
সেই দিক থেকে এক অদ্ভুত ঝাঝাল মিষ্টি
গন্ধ আসছে। আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন
আমাকে ডাকছে।
আমি মালাইকা কে এই বিষয়টি সম্পর্কে
জানতে চাইলে সে আমাকে বলল:
মালাইকা: এই মন্দির এর নিচে পূজা চলছে।
এখানে এক যোগী তান্ত্রিক থাকে। আর
ওনার অনেক ক্ষমতা। উনি পিশাচসিদ্ধ
সাধক। উনি শয়তানের উপাসনা করেন। উনি
পৃথিবীতে শয়তানকে মানুষ রূপে আবির্ভূত
করতে চান। আমি ওনাকে সহায়তা করি।
এখানকার আর কেউ জানে না এই বিষয়ে।।
এই মন্দিরকে সবাই ভয় পায় কারণ সবাই
জানে যে এখানে পিশাচ থাকে। এখানে
আসলে কেউ ফিরে যেতে পারে না।
আর নিচে গেলেই সবটা বুঝতে পারবেন।
আমি কোনো দিন এসবে বিশ্বাস করি না
তাই আমার প্রচন্ড কৌতুহল হলো নিচে কি
হচ্ছে তা দেখার জন্য।
আমি ওর সাথে সাথে নিচে গেলাম। ওখানে
গিয়ে দেখি এক যোগী সেখানে এক ভয়ঙ্কর
কালো এবং কুৎসিত মূর্তিকে পূজা করছে আর
তার পাশেই শুয়ে আছে এক যুবতী নারী।
দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রচন্ড ভয় পেয়ে
আছে।
মেয়েটি যেনো আমাকে বলতে চাইছে
পালাও এখান থেকে পালিয়ে যাও....
কিন্তু আমার পা যেন অবস হয়ে আসছে।
যেন আমার সমস্ত শক্তি লোপ পাচ্ছে। আমি
চাইলেও যেনো পালাতে পারব না।
হঠাৎ করেই যোগী আমার দিকে তাকালেন
তার ঠান্ডা চোখের দৃষ্টিতে স্পষ্ট নিষ্ঠুরতা
ফুটে উঠেছে। আমি তার চোখের দিকে
তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখ নামিয়ে
নিলাম।
উনি আমাকে বসতে বললেন আর মালাইকা
কে ডেকে কিছু একটা বললেন। মালাইকা
আমাকে় বলল সে পূজার জন্য কিছু একটা
আনতে যাচ্ছে
তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে।এই বলে সে চলে
গেল।
আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বসলাম।।
যোগী তার পূজা শুরু করল।কিছুক্ষণ পর পর সে
তার পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটির চুল ছিড়ে
ছিড়ে আগুনে ফেলছে। মেয়েটির চিৎকারে
চারপাশটা কেপে কেপে উঠছে। এবার যোগী
মেয়েটির জিহ্বা একটানে ছিড়ে নিয়ে
ভয়ঙ্কর ভাবে হা.....হা....করে হাসতে
লাগলো। তার হাসিতে মন্দিরটা যেনো
কাপছে। মেয়েটির গোঙানির শব্দ এবং
যোগীর মন্ত্র পাঠের শব্দ মিলে মন্দির এর
মধ্যে যেনো ঝড় তুলে দিল। এরপর সে
মেয়েটির এক এক টা ওঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে
মূর্তির সামনে রেখে পূজা করতে লাগল।
এসব দেখে আমি চিৎকার করে দৌড়ে
পালিয়ে যেতে চাইলাম কিন্তু আশ্চর্যজনক
ভাবে আমার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হল
না এমনকি আমি একচুলও নড়াচড়া করতে
পারলাম না।
পূজা শেষ হলে সে আমার গায়ে মেয়েটির
রক্ত ঢেলে দিল। রক্ত গায়ে পড়ার সাথে
সাথে আমার গায়ে খিচুনি শুরু হয়ে গেল।
মনে হচ্ছে আমার গায়ে আগুন ধরে গেছে।
সারা গা জ্বলে যাচ্ছে। কেউ যেন দূর থেকে
বলছে আসছি আমি আসছি। প্রচন্ড পিপাসায়
আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। এ পিপাসা যেন
পানিতে মিটবে না আমার রক্ত চাই।
শুধুমাত্র রক্ত খেলেই এই পিপাসা কমবে।
আমি পাগলের মতো মেয়েটির রক্ত চেটে
চেটে খেতে লাগলাম। এরপর মূর্তির সামনে
রাখা মেয়েটির টুকরো টুকরো দেহটা আমি
পরম তৃপ্তির সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া
শুরু করলাম।
এমন সময় দেখলাম মালাইকা এসে দাড়িয়ে
আছে এবং তার হাতে একটি পাত্র। তাকে
দেখে আমার ভেতর থেকে কেউ যেন বলে
উঠলো এইতো আমি পেয়েছি।
আমার মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। আমি তার
দিকে অগ্রসর হলাম।
যখন আমি মালাইকার কাছাকাছি গেলাম
মালাইকা তার হাতের পাত্র থেকে কিছু
একটা তরল পদার্থ আমার গায়ে ছিটিয়ে
দিতে থাকে।তরল পদার্থ আমার গায়ে
ছিটিয়ে দিতেই হঠাৎ করেই আমি এক ধরনের
প্রশান্তি অনুভব করতে থাকি।
প্রচণ্ড ঘুমে আমার দুচোখ জুড়িয়ে আসে। যখন
আমার ঘুম ভেঙে যায় আমি নিজেকে একটা
ছোট্ট ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করি।
অনুভূতি গুলি সব যেন ভোতা হয়ে গেছে।
উঠতে গিয়ে মনে হলো বুকের উপর ভারি
কোনো কিছুর একটা চেপে আছে। ভালো
করে
তাকিয়ে দেখি মালাইকা আমার বুকের উপর
ঘুমাচ্ছে।
হঠাৎ করে আমার গত রাতের কথা মনে পড়ে
যায়। আমি ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দিয়ে
উঠে পরি।
আমার ধাক্কা খেয়ে ওর ঘুম ভেঙে যায়। ও
উঠে আমার দিকে তাকিয়ে রক্ত হিম করা
হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করে
: ঘুম কেমন হলো বাবু
: আমি কোথায় এখন।
: এতো অধৈর্য হচ্ছেন কেন বাবু। সারা রাত
তো আদর সোহাগে আমাকে ঘুমাতে দিলেন
না এখন এত তাড়া কিসের আছে হা।
: বাজে কথা বন্ধ কর। আমাকে বল কোথায়
আটকে রেখেছো আমাকে।
: কে বলল রে বাবু আমি আপনাকে আটকে
রেখেছি আপনার যেখানে ইচ্ছা আপনি
যেতে পারেন তবে আবার আপনাকে এইখানে
ফিরে আসতেই হবে।
আমি ওর কথা গ্রাহ্য না করে উঠে পরি।
এবার সম্পূর্ন ঘরটি আমি দেখতে পাই। ঘরের
ভেতরটা দেখে আমার মাথা ঘূ্রতে থাকে
আমি দেখতে পাই ঘরের এক কোণে অনেক
গুলো মেয়ের কাটা মাথা স্তুপ করে রাখা
কিন্তু কারো মাথায় চুল নেই। কেউ যেন চুল
গুলো চামড়া সহ তুলে নিয়েছে। আর অন্য
প্রান্তে তাদের দেহের বিভিন্ন টুকরো
টুকরো অঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমি
আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।
জ্ঞান হারালাম।
যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে আমি
নিজেকে বাংলো বাড়িতে দেখতে পাই।
আমার মনে হলো এতোক্ষণ স্বপ্ন
দেখেছিলাম।আমি গত রাতের কথা ভাবতে
থাকি। হঠাৎ করেই বাইরে অনেক কোলাহল
শুনতে পাই বারান্দায় গিয়ে দেখি অনেক
মানুষের ভিড়। আমাকে দেখামাত্রই সবাই
যেনো আরও বেশি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। সবকিছু
দেখে আমি নিচে যায় যাওয়ার পর সবার
কাছে থেকে যা শুনতে পাই তাতে করে
আমার পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
সবাই বলছে আমি নাকি মালাইকা কে ধর্ষণ
করেছি। আমাকে এখন মালাইকা কে বিয়ে
করতে হবে না হলে ওরা আমাকে মেরে
ফেলবে।
আমি সবাইকে গত রাতের কথা সব খুলে বলি
কিন্তু ওরা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করে
না।
সবাই মিলে জোর করে আমার সাথে
মালাইকা কে বিয়ে দিয়ে দেয়। এবং
আমাকে বাধ্য করে মালাইকা কে নিয়ে
ফিরতে। আমি বাধ্য হয়ে মালাইকা কে
সাথে করে বাড়ি ফিরে এলাম।
আমি ঢাকায় নিজের ফ্লাটে থাকি বাবা
মা গ্রামে থাকেন। বাবা মা জানতে
পারলে খুব কষ্ট পাবে তাই কাউকে কিছু
জানায়নি। এখানে আসার পর থেকে ও ওর
মতো আর আমি আমার মতো থাকি।
কয়েক মাস পর আমি জানতে পারি যে
মালাইকা গর্ভবতী। এবং মালাইকা দাবি
করে যে বাচ্চার বাবা নাকি আমি। যেহেতু
একটি রাত সে আমার সাথে ছিল তাই আমি
বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নেই।
আমি ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে চাইলে
ও আপত্তি জানায়। আমি তাই আর ওকে জোর
করিনা।
ইদানীং আমার রাতে ভালো ঘুম হয় না।
ঘুমের মধ্যে ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নের
মধ্যে আমি একটা বাচ্চাকে দেখতে পাই। দুই
হাত বাড়িয়ে সে আমার কাছে আসতে
চাচ্ছে কিন্তু যখনই আমি বাচ্চাটাকে ধরতে
যায় কেউ একজন আমাকে বাধা দেয়।
বাচ্চাটি তখন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে এবং
আমার দিকে এগিয়ে আসে ঠিক তখনই আমার
ঘুম ভেঙে যায়।
গত তিন দিন আগে আমি যখন অফিসে
যাওয়ার জন্য বের হয় হঠাৎ করেই এক বৃদ্ধের
সাথে আমার ধাক্কা লাগে এবং সে
আমাকে বলে বাচ্চাটাকে আসতে দিওনা
মেরে ফেলো মেরে ফেলো। আমি তাকে
পাগল ভেবে বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি কিন্তু
তার পর থেকে যেখানে যাই সেখানেই তার
সাথে আমার দেখা হয় এবং সে একই কথা
আমাকে বলতে থাকে।
আজ যখন আমি আমার অফিস থেকে বের
হচ্ছিলাম তখন আবার সেই লোকটার সাথে
আমার দেখা হয়। আমি লোকটির কাছে
জানতে চাই কেন উনি আমাকে প্রতি দিন
একই কথা বলেন।
লোকটি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে
থাকে এবং সে আমাকে যা বলে তাতে করে
আমি খুব ভয় পেয়ে যায়।
লোকটা আমাকে বলল
: সাহেব আপনি যাকে বিয়ে করে এনেছেন
সে আপনাকে খুন করে পৃথিবীর বুকে শয়তান
রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে।
: কি বলছেন এসব!
: ঠিকই বলছি আপনার বউ এর পেটে যে বাচ্চা
আছে সে আপনার বাচ্চা না সাহেব সে
শয়তানের বাচ্চা। মনে করে দেখুন সাহেব ৬
মাস আগের কথা। সেই রাতে কি ঘটেছিল
ভালো করে মনে করার চেষ্টা করেন ।
: আপনি কি করে জানলেন সেই রাতের কথা।
সেই দিনের কথা তো কেউ জানে না।
কে আপনি ,এ সব কথা আপনি কি করে
জানলেন?লোকটা এইবার একটু গম্ভীর হয়ে
গেল।
বলল, সাহেব আপনি যদি সবটা জানতে চান
তাহলে আসেন আমার সাথে।
আমি চললাম তার সঙ্গে।
তিনি আমাকে শহরের বাইরে একটি পুরোনো
বাড়িতে নিয়ে গেলেন। বাইরে থেকে
দেখতে খুবই সাধারণ একটি বাড়ি কিন্তু
ভেতরটা দেখে আমি চমকে উঠলাম।
উনি আমাকে একটি ঘরের ভেতর নিয়ে
গেলেন। ঘরটিতে পুরোনো দিনের দুর্লভ
জিনিস পত্র দিয়ে ভরা যা সচরাচর চোখে
পড়ে না।
এর পর উনি আমাকে অন্য একটি ঘরে নিয়ে
গেলেন এই ঘরটিতে রয়েছে বিভিন্ন রকম
সাধনার সরঞ্জাম।
উনি আমাকে একটি পুরোনো আসনের ওপর
বসতে দিলেন। এরপর উনি আমার সামনের
দিকে একটি উচু আসনে বসলেন।
উনি আমার গায়ে কাঠের গুড়ার মতো একরকম
গুড়া ছিটিয়ে দিলেন। হঠাৎ করে আমার মনে
হলো আমি যেনো কোনো এক অতল
গহ্বরে
তলিয়ে যাচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর আমি নিজেকে সেই মন্দিরে
আবিষ্কার করি যেখানে আমি মালাইকার
সাথে গিয়েছিলাম। আমি যেন চোখের
সামনে
৬ মাস আগে ঘটে যাওয়া দৃশ্য গুলো দেখতে
পাচ্ছি ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে চিৎকার
করে উঠি।
চোখ খুলে আমি আবার নিজেকে লোকটির
ঘরে আবিষ্কার করি।
ঘেমে আমার শার্ট ভেজে গেছে। লোকটা
আমাকে মাটির বাটিতে করে পানি এগিয়ে
দিল। এক চুমুকে আমা সব টুকু পানি খেয়ে
নিলাম।আমি ওনার কাছে এসবের মানে
জানতে চাইলাম।উনি আমাকে যা বললেন
তা হলো
লোকটা : আমার নাম কুরতুগল। আমরা ২ ভাই।
এক সময় আমরা খুব ধনী ছিলাম। ভালই
কাটছিল আমাদের সময়।
বাবা বড় ব্যবসায়ি ছিলেন হঠাৎ বাবা মারা
যান সমস্ত ব্যবসার ভার পড়ে আমাদের দুই
ভাইয়ের হাতে।আমাদের দুই ভাইয়েরই যুয়া
খেলার নেশা ছিল।
কিছু দিনের মধ্যেই সব টাকা সম্পত্তি শেষ
হয়ে যার। আমরা ২ভাই মিলে তখন দিন
মজুরের কাজ শুরু করি। একদিন যখন আমরা
বাড়ি ফিরছিলাম এক তান্ত্রিক এর সাথে
দেখা হয়
সে বলে তার কথামতো কাজ করলে উনি
আমাদের আবার ধনী করে দেবে। আমরা
ওনার কথা মেনে নিয়ে ওনার সাথে কাজ শুরু
করি।।
উনি আমাদের কে বলে উনি শয়তানের
উপাসক পৃথিবীর বুকে শয়তান রাজ্য
প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই জন্য প্রতি
অমাবস্যা ও পূর্ণিমা রাতে একটি করে যুবতি
মেয়ের লাশ চাই।
তখন আমরা বিভিন্ন উপায়ে যুবতি মেয়েদের
ধরে আনতে থাকি। প্রথমে বিষয়টা কেউ
বুঝতে না পারলেও পরবর্তীতে সবাই বুঝতে
পেরে যায়। এবং পুলিশ আমাদের খুজতে
থাকে।
বাধ্য হয়ে আমরা রাতের আধারে গা ঢাকা
দিয়ে পার্বত্য এলাকায় চলে যাই।বেশ কিছু
দিন জঙ্গলে জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে একটি
পুরোনো মন্দিরে আশ্রয় নেই। মন্দিরটি ছিল
এখানকার উপজাতিদের।
বিভিন্ন উপায়ে আমরা তাদের ভয় দেখিয়ে
মন্দির থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেই।
তারপর থেকে আমরা সেখানে শয়তানের
উপাসনা করতে থাকি এবং প্রতি অমাবস্যা
ও পূর্ণিমায় একজন করে যুবতী মেয়ে ধরে
এনে
বলী দিতে থাকি।
তান্ত্রিক আমাদের বলে যে ২৯জন মেয়ে আর
১জন বৃদ্ধা কে উপসর্গ করলে আমরা আমরা
অলৌকিক ক্ষমতা লাভ করব।
২৯জন মেয়ে উপসর্গ করার পর আমরা যখন
বৃদ্ধার খোঁজে যাব তখন তান্ত্রিক একটি
ভয়ঙ্কর কথা বলে যা শুনে আমার সর্বাঙ্গ
অবস হয়ে আসে।
তান্ত্রিক বলে
: তোদের কাজে আমি খুশি হয়েছি। কিন্তু
এখন একজন বৃদ্ধাকে বলী দিতে হবে, আর
সেই
বৃদ্ধা হতে হবে নিজের জন্মদাত্রী মা। না
হলে এই সমস্ত কিছু বিফলে যাবে।
আমরা দুই ভাই ই চমকে উঠলাম এই কথা শুনে।
কারণ বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা
তাঁর বাবার বাড়ি থাকে।
এতদিন আমরা তাঁর কোনো খোঁজ খবর নেই
নি এখন কি করে তাকে আনব। আর তার থেকে
বড় কথা নিজের জন্মদাত্রী মা কে কি করে
বলী দেবো।
আমি তান্ত্রিককে বললাম আমার পক্ষে এ
কাজ সম্ভব না।
কিন্তু আমার ভাই ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে
গিয়েছিল। তাই সে আমার হাজার বারণ
শর্তেও মা কে নিয়ে আসে বলী দেওয়ার
জন্য।
আমি বাধা দেওয়ায় আমাকে মন্দিরের ই
একটি পুরোনো ঘরে আটকে রাখে। তখন
বলীর
আর মাত্র ২ দিন বাকি। আমি সেই বন্ধ ঘরে
বেশ কিছু পুরোনো বই দেখতে পাই। আমি
কৌতুহলবশত বইগুলি দেখতে থাকি।
দেখি প্রত্যেকটা বই ই পৃথিবীতে শয়তান
প্রতিষ্ঠার উপায় এবং তা বাধা দেওয়ার
উপায় সম্পর্কে লেখা। আমি সব বই পড়তে শুরু
করি।
আমি জানতে পারি যে যদি আমার মা কে
উৎসর্গ করে যে ঐ রক্ত দিয়ে গোসল করবে
সে
পৃথিবীর সকল অপশক্তির মালিক হবে তার
সমস্ত ইচ্ছা পুরণ হবে।
কিন্তু আমি কিছুতেই নিজের জন্মদাত্রী মা
কে বলী দেওয়ার কথা ভাবতে পারছিলাম
না। আবার ওদের হাত থেকে মা কে
বাচানোর পথও পাচ্ছিলামনা তাই আমি
ওদেরকে মিথ্যা মিথ্যা সমর্থন করি ওরাও
আমাকে বিশ্বাস করে।
বলীর দিন সন্ধ্যায় আমি আমার ভাইকে
ডেকে উল্টোপাল্টা বলি। আমি ওকে বলি যে
তান্ত্রিক আমাদের কে ভুল বুঝিয়েছে।
মা কে বলী দিলে সকল ক্ষমতার অধীকারি
হবে তান্ত্রিক আর তান্ত্রিক কে বলিদান
করলে সব ক্ষমতা লাভ করব আমরা।
সে আমার কথা মেনে নেয় এবং আমরা দুই
ভাই মিলে ঐ তান্ত্রিক এর কাছে থেকে কে
বলী দেওয়ার মন্ত্র জেনে নিই। এই পর্যন্ত
বলে লোকটা একটু থামে।
আমি অবাক হয়ে লোকটার কথা শুনতে
থাকি।
লোকটা আবার বলা শুরু করে.......
ঘোর অমাবস্যা
তান্ত্রিক পূজা করতে বসে। তার পূজা শেষ
হলে সে আমার মা কে বলী দেওয়ার জন্য
আনে এবং বলীর মন্ত্র পড়তে থাকে। মন্ত্র
পড়া শেষ হলে আমাকে বলল মা কে বলী
কাঠে মাথা দেওয়াতে......
আমি আর আমার ভাই তৈরিই ছিলাম আমি
তান্ত্রিক কে ধাক্কা দিয়ে বলী কাঠে
মাথা চেপে ধরি আর আমার ভাই এক কোপে
তান্ত্রিকের মাথা কেটে ফেলে।
এরপর যা ঘটে গেল তা মনে হলে এখনো
আমার সর্বাঙ্গগে কাঁটা দেয়।
আমি দেখতে পেলাম তান্ত্রিকের কাঁটা
মাথা বলে উঠল...
""ভুল করলে তোমরা... ভুল করলে।তোমরা আর
অমর হতে পারবেনা।""
আমার ভাই একথা শুনে আমার ওপর প্রচণ্ড
রেগে যায় এবং বলীর ছুরি আমার দিতে
ছুড়ে মারে কিন্তু লাগে আমার মায়ের গায়ে
আমার মা মারা যায় আর আমি পালিয়ে
আসি। কিন্তু আমার ভাই থামেনি। শয়তান
সাধনার সমস্ত বই ওর হাতে পড়ে এবং সে
নতুন করে আবার শয়তান সাধনা শুরু করে।
যুবতী মেয়ে ধরে এনে বলী দিতে থাকে।
আর আমি ঠিক করি যেটুকু ক্ষমতা অর্জন
করেছি তা দিয়ে ভাল কাজ শুরু করব সেই
থেকে আমি শয়তানী শক্তির বারী কাছ
করে যাচ্ছি।
: কিন্তু আমি কি করতে পারি আর আপনি কি
করে জানলেন যে আমার স্ত্রীর গর্ভে যে
বাচ্চা আছে সে আমার না শয়তানের
বাচ্চা।
: আপনাকে আমি যেদিন প্রথম দেখি সেই
দিনই বুঝতে পারি যে আপনার শরীরে
শয়তান ঢুকেছিল এবং পরে আমি খোঁজ খবর
নিয়ে সব জানতে পারি।
আপনার স্ত্রী নিজেও শয়তানের উপাসক।
সন্তান প্রসবের সতের দিন পর সে আপনাকে
খুন করে আপনার রক্ত দিয়ে ওই বাচ্চাকে
গোসল করাবে।
আপনার দ্বারা আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হলেও
বাচ্চাটা শয়তানের কারণ যখন আপনারা
মিলিত হন তখন আপনার মধ্যে শয়তান ছিল।
এবার আমার কাছে সবটা পরিষ্কার হয়
আমি জানতে চাই এখন আমার করনীয় কি?
: লোকটি আমার হাতে একটি চিহ্ন একে দেয়
আর বলে আমাকে সাবধানে থাকতে।
আমি যেন আর তার কাছে না যায়। সময় মত
সে নিজেই আমার সাথে দেখা করবে।
আমাকে শুধু মালাইকার ওপর নজর রাখতে
বলে।
আমি বাড়িতে ফিরে যায়। এবং মালাইকার
ওপর নজর রাখতে থাকি। এক দিন রাতে হঠাৎ
করে আমার ঘুম ভেঙে যায়। পাশের রূমে
আলো জলা দেখে কৌতুহল বসত আমি দেখতে
পাই,
মালাইকা মন্দিরের ঐ তান্ত্রিক এর সাথে
কথা বলছে ওদের কথা শুনে বুকের মাঝে ধক
করে উঠলো। এরা দুইজন মিলে আটসাট বেঁধেই
নেমেছে। এই মালাইকা কে শেষ করতে না
পারলে আমাদের মানুষদেরকে একে একে
শেষ করে ফেলবে এই ডাইনিটা।
তান্ত্রিক বলল : আর ২মাস পর পূর্ণিমা রাত
তোর বাচ্চা জন্ম নেবে আর তার পনের দিন
পর তুই তোর স্বামী রোহান কে বলী দিয়ে
ওর রক্ত দিয়ে গোসল কররাবি তার পর তুই আর
তোর বাচ্চা পৃথিবীর সকল অপশক্তির মালিক
হবি।
আর আমিও সাধনা করে অমর হব।
- সেটা তো বুঝলাম কিন্তু তুমি তো
বলেছিলে এমন একটা পুরুষের সাথে মিলিত
হতে হবে যার পূর্ব পুরুষেরা শয়তান সাধনা
করতো।
কিন্তু আমার জানা মতে রোহানদের কেউ
পিশাচ সাধনা করতো না। তাহলে আমার এই
পেটের সন্তান কিভাবে অনেক ক্ষমতার
অধিকারী হবে?
তুই কিইবা জানিস। আমি অনেক কিছু জানি।
আমার শয়তান শক্তি দিয়ে অনেক আগে
থেকেই আমি জানতে পারি
যে রোহানের
পূর্ব পুরুষ শয়তান সাধনা করতো।
তান্ত্রিক আর কিছু বললো না।
ওদের কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
কারন এর হাত থেকে হয়তো আর আমি মুক্তি
পাবো না। আমি মুক্তি পাবো না এটা
ভেবে কোনো কষ্ট হচ্ছে না। আমার চিন্তা
হচ্ছে এটা ভেবে যে তান্ত্রিক এর কথা যদি
সত্যি হয় আর ঐ বাচ্চার যদি জন্ম হয় তাহলে
অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কাউকে বাঁচতে
দিবে না এই ডাইনিটা। যদি কোনো ভাবে
মালাইকা কে শেষ করা যেতো তাহলে
অনেক ভালো হত। বেঁচে যেতো নিরিহ মানুষ
গুলো।
যখন আমি এই সমস্ত কিছু ভাবছি হঠাৎ করে
তান্ত্রিক আমার চোখের সামনেই একটা
ধোয়ার মত কুন্ডুলি পাকিয়ে উধাও হয়ে
গেলো।
আমি অবাক হয়ে ভাবছি তান্ত্রিক গেলো
কোথায়?এরই মধ্যে একটা ছোট বাচ্চাকে
কোথা থেকে যেনো নিয়ে এলো। তারপর
আমার সামনে সেই বাচ্চাটার গলায় কোপ
দিয়ে দুই খন্ড করে ফেললো। উফফ কি নির্মম
দৃশ্য। সহ্য করতে পারছি না আমি। তারপর ঐ
বাচ্চাটার রক্ত একটা পাত্রে রেখে দিলো।
এরপর কিছু চুল ওর মধ্যে ছেড়ে দিল রক্তের রং
লাল থেকে কালো বর্ণ ধারন করলো। তারপর
সেই নীল রক্ত ঢকঢক করে খেয়ে নিলো
মালিকা। ওর এই কান্ড দেখে আমার বমি
এসে যাচ্ছিলো।
আমি ওখান থেকে চলে আসলাম। এর পর
থেকে আমি খুব সতর্ক থাকি। এইভাবে
দেড়মাস কেটে গেল।
আমি কখনো মালাইকা কে বুঝতে দিইনি যে
আমি সব জেনে গিয়েছি।
মাঝে মাঝেই গভীর রাতে ঐ তান্ত্রিক
আসতো আর বিভিন্ন কথা বলতো ওরা দুজনে
আর আমি আড়াল থেকে সব শুনতাম।
একদিন তান্ত্রিক বলল
- একটা বড় ধরনের পূজার ব্যাবস্থা করেছি ।
আর সেই পূজায় দুইটা নর বলি দিতে হবে।
আমাদের প্রভু শয়তানকে উৎসর্গ করতে হবে।
: এই পুজাটা কি খুবই জরুরী? এটা না করলে
কি হবে?
:এই পূজাটা করতে হবে আমাদের শয়তানের
বাচ্চকে পৃথিবীতে আসার আয়োজনে জন্য।
ওর তো প্রায় আসার সময় হয়ে গেছে। আর এই
নরবলী দিয়ে আমাদের প্রভুকে খুশি করতে
হবে ।
-আমি বলী দেয়ার জন্য দুই জন যুবতী মেয়ে
ধরে নিয়ে এসেছি। তুই আমার সাথে চল।
পুজার লগ্ন বয়ে যাচ্ছে। হাতে আমাদের
বেশি সময় নেই।
.
মালাইকাআর কথা বাড়ালো না। আগের মতই
ধোয়ার কুন্ডলি পাকিয়ে মালাইকা আর
তান্ত্রিক অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমার মনে
হচ্ছে আমি একটা দুষস্বপ্ন দেখতেছি। এখনি
ঘুম উঠে দেখবো আমি আমার রুমেই আছি।
কিন্তু না এটা কোনো স্বপ্ন না। ভয়ংকর সত্য
ঘটনা।
আমি এখন কি করব কিছুই বুঝতে পারছিনা।
হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে আমার চিন্তার
সুতো ছিড়ে যায়।এতো রাতে কে এলো
দেখার জন্য দরজা খুলতেই দেখি কুরতুগল
দাড়িয়ে আছে।
প্রথমে আমি ওনাকে দেখে অবাক হলে
ওনাকে ভেতরে নিয়ে আসি। উনি সম্পূর্ণ
ভাবে আমাকে উপেক্ষা করে ঘরের
চারপাশে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকেন
এবং আমাকে কথা বলতে নিষেধ করলেন।
হঠাৎ করে সে উল্লসিত হয়ে উঠল তারপর সে
ঘরের কোণে রাখা ফুলদানীটি তুলে নিল।
এবার উনি ফুলদানীর ভেতর থেকে কিছু
পুরোনো শুকনো হাড় ও চুল বের করলো।
আমি
অবাক হয়ে ওনার কাজ কর্ম দেখতে থাকি।
এবার উনি কথা বলে উঠল, উনি বললেন এই চুল
আর হাড় গুলো পুরিয়ে সেই ছাই ফুলদানীতে
রাখতে। এবং আরো বললেন
: আগামী পূর্ণিমা রাতের তৃতীয় প্রহরে
মালাইকা বাচ্চা প্রসব করবে আর পরের
অমাবস্যায় আপনাকে বলী দিয়ে ঐ রক্ত
দিয়ে বাচ্চটিকে গোসল করাবে । ও যদি
আপনার রক্ত দিয়ে ওই বাচ্চাকে গোসল
করাতে পারে তাহলে ঐ বাচ্চা সকল
অপশক্তির মালিক হবে আর তান্ত্রিক এবং
মালাইকা অমরত্ব লাভ করবে। আর যদি ওরা
বিফল হয় তবে তান্ত্রিক আর মালাইকা
মারা যাবে। কিন্তু বাচ্চাটা শয়তানের
ঔরসে জন্মগ্রহণ করার ফলে ওর মধ্যে অনেক
ক্ষমতা থেকে যাবে।
:তবে কি শয়তানি শক্তির হাত থেকে
কিছুতেই মানুষকে রক্ষা করা যাবেনা?
: যাবে। তবে ওর ক্ষমতা নষ্ট হবে না। ওর
ক্ষমতা শুভ শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। আপনি
যে সব কিছু জেনে গিয়েছেন ঘুনাক্ষরেও যেন
ওরা জানতে না পারে। ওরা দুজনে জানতে
পারলে ভিষন বিপদ হবে আপনার ।
এ কথা বলেই লোকটা চলে গেল।
আমি সব আলো বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে
গেলাম।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।
হঠাৎ করে এক দুঃস্বপ্ন দেখে আমার ঘুম
ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল হয়ে
গেছে।
গত দিনের কথা সম্পূর্ণ চেপে রেখে
রোজকার মতো আমি অফিস চলে গেলাম।
এভাবে ১৪দিন কেটে গেল।
অফিসে পৌঁছে কিছুতেই কাজে মন
বসছিলনা। কিছুক্ষণ পর পিওন এসে জানাল
কেউ একজন আমার সাথে দেখা করতে চায়।
আমার অনুমতি পেয়ে পিওন বেরিয়ে গেল।
প্রায় সাথে সাথেই কুরতূগল প্রবেশ করল।
তাঁর চোখ মুখে দুশ্চিন্তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
উনি আমাকে কয়েক কোয়া কাচা রসুন , একটা
লাল কাপড়ে বাধা শুকনো মরিচ, একটা
খাঁচায় একটা টিয়া পাখি দিলেন। এবং
আমাকে বললেন
সব সময় এগুলো কাছে রাখতে। উনি আরও
বললেন
: আর এক দিন পর অমাবস্যা। ঐ রাতে যেন
আপনি কোনো ভাবেই ঘুমিয়ে পড়বেন না।
ঘুমিয়ে পড়লে সেই ঘুম আর কখনো ভাঙবেনা।
ঐ রাতে স্বয়ং শয়তান হাজির হবে। সে
নিজের জয় দেখতে আসবে।
: কিন্তু আমি কি করে জানব শয়তান আসবে?
: যখন শয়তান আসবে তখন চার পাশ স্তব্ধ হয়ে
যাবে। একটি ঝিঁঝিঁ পোকাও ডাকবে না। ও
আসবে আপনার প্রাণ নিতে।
আর ও যদি পরাজিত হয় তবে তান্ত্রিক আর
মালাইকা কে মেরে ফেলবে।
ও আরও চেষ্টা করবে ওর বাচ্চাটা নিয়ে
যাওয়ার জন্য।কিন্তু আপনাকে বাঁচাতে হবে
ঐ বাচ্চাকে।
আর সেইটা আপনি নিজের প্রচেষ্টা দিয়ে
সম্ভব করবেন।
এই পর্যন্ত বলে উনি আমার বৃদ্বাঙ্গুলে একটা
চিহ্ন একে দেয় আর বলে
: এই চিহ্ন থাকলে শয়তান আপনার কিচ্ছু
করতে পারবে না।
আর কিছু না বলে উনি চলে গেলেন।
আরও একটি দিন শেষ হয়ে গেল। আজ
অমাবস্যা। আমি অফিস থেকে ফিরে দেখি
মালাইকাকে খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে। আমি
আর ওকে খেয়াল না করে নিজের রূমে চলে
গেলাম। পাখির খাচাটা নামিয়ে রাখলাম।
ভয় আর অস্বস্তির এক অদ্ভুত অনুভূতি আমাকে
আচ্ছন্ন করে নিল। আমি দরজা জানালা
ভালো করে আটকে বসলাম।
রাত ১ টা।
পাশের রুমে কারো আওয়াজ পেয়ে ভয়ের
মাত্রা আরও বেড়ে গেল।
সময় গড়িয়ে চলেছে।
হঠাৎ....
কিছুক্ষণ পর আপনা আপনি আমার রুমের
দরজা খুলে গেল। আর আমি ঘুমের ভান করে
শুয়ে থাকলাম।
কিছুতেই যাতে বুঝতে না পারে যে আমি
জেগে আছি।
আমি একটুখানি চোখ খুলে দেখলাম
তান্ত্রিক আর মালাইকা প্রবেশ করল।
ওরা ভেবেছে আমি ঘুমিয়ে আছি।
তান্ত্রিক বলল
: খুব তাড়াতাড়ি ওকে অজ্ঞান করতে হবে।
মালাইকা আমার নাকের কাছে একটা কিছু
ধরল।
আমি নিঃশ্বাস আটকে রাখলাম।
হঠাৎই আমি যেন শূন্যে ভাসতে লাগলাম।
একটু তাকাতে আমি নিজেকে মালাইকার
ঘরে আবিষ্কার করলাম। ওরা আমাকে একটি
চৌকির ওপর শুইয়ে দিল। আর নিজেরা ঘরের
মেঝেতে আগুন জ্বেলে পূজোয় বসল। ভাগ্য
ভাল যে আমি যেখানে আছি ওরা সেদিকে
পেছন হয়ে বসেছে।
আমি একটু নড়তেই কিছুর সাথে গুঁতো লাগলো।
তাকিয়ে দেখি রাইয়ান।
হঠাৎ ওরা জোরে জোরে মন্ত্র পড়তে শুরু
করে। আর আমার মাথার মধ্যে ব্যথা শুরু হয়।
আমি অস্থির হয়ে পড়ি।
আমি চিৎকার করে উঠে বসলাম।
আমার চিৎকারে ওরা চমকে যায়। তান্ত্রিক
মালাইকা কে বলে ওঠে ওকে সম্মোহন করো।
মালাইকা আমার দিকে এগিয়ে আসতে
থাকে।
আমার মনেপড়ে কুরতূগলের দেওয়া জিনিস
গুলোর কথা। সেগুলো আমার পকেটেই আছে।
আমি পকেট থেকে লাল কাপড়ে বাধা শুকনো
মরিচ গুলো আগুনে ছুড়ে ফেললাম। আগুনে
মরিচ পুড়তেই ঝাঁঝাল গন্ধে ঘর ভরে উঠল।
সবার হাচি কাশি শুরু হয়ে গেল। কিন্তু
আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো বাচ্চাটির কিছুই
হলোনা।
হঠাৎ করে চারপাশ কেমন স্তব্ধ হয়ে গেল ।
আমার কুরতুগুলের কথা মনে পড়েগেল।
ও এসে গেছে।
আমি এক ঝাটকায় বাচ্চাটিকে কোলে তুলে
নিলাম। পকেট থেকে রসুন কোয়া গুলো পড়ে
যেতে পারে তাই মুখের মধ্যে নিলাম।
হঠাৎ গরম এক ঝলক বাতাস সব কিছু লন্ডভন্ড
করে দিল।
আমি চোখ বন্ধ করে বাচ্চাটিকে শক্ত করে
বুকের সাথে ধরে রাখলাম। হঠাৎ একটি
চিৎকারে চোখ খুলে দেখলাম তান্ত্রিক এর
মাথা কাটা দেহ আমার সামনে পড়ে আছে।
আর মালাইকার দেহ ঝলসে গেছে।
ওর চেহারার একপাশ একদম বিভৎস হয়ে আছে!
ভয়ে আমি কিছু দূরে গড়িয়ে পড়লাম। ওর
মুখটা আরো থ্যাতলানো, বিশ্রী একটা রূপ
নিচ্ছে। আমি ভয়ে কুকড়ে গেলাম। মূহুর্তেই
সে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমি অনবরত ঘেমে যাচ্ছি। হৃদস্পন্দন বেড়েই
চলেছে। ঘড়িতে সেকেন্ডের কাটার শব্দটাও
আমার কাছে ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে।
হঠাৎ দেখি চোখের সামনে সব কিছু অদৃশ্য
হয়ে গিয়েছে।
পাশের ঘর থেকে টিয়ার ডাক ভেষে এলো।।
বাচ্চাটি যেন হেসে উঠল।
শুরু হলো নতুন জীবন।
।। সমাপ্ত ।।